logo
news image

১৩ ডিসেম্বর লালপুর মুক্ত দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক, লালপুর (নাটোর)
১৩ ডিসেম্বর। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই গৌরবোজ্জ্বল দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কালো থাবা থেকে মুক্ত হয়। লালপুরবাসীর জীবনে অত্যন্ত স্মরণীয় একটি দিন।
লালপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আকিয়াব হোসেনের সভাপতিত্বে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি । বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কর্পোরাল (অব:) শামসুল ইসলাম, মাজদার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক মালিথা, আজবার হোসেন।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনী দেশীয় দালাল ও রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিকান্ড ও লুটতরাজ চালানোর পর এই দিনে লালপুর থেকে বিতাড়িত হয়। ওইদিন বর্বর খান সেনারা উপজেলার মহেশপুর গ্রামে ঝটিকা আক্রমণ করে ৩৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। ৩০ মার্চ ময়নায় সম্মুখযুদ্ধে মুক্তি সেনারা হানাদারদের ২৫ নং রেজিমেন্ট ধ্বংস করে দেয়। সেদিন প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩২ জন আহত হন। ঐদিনই পাক সেনাদের ছোঁড়া একটি সেলে চামটিয়া গ্রামে ৩ জন শহীদ হন। ১২ এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজের নিকট প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০/১২ জন শহীদ হন। ১৭ এপ্রিল দুয়ারিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে।
৫ মে পাক হানাদার বাহিনী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকা ঘেরাও করে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে: আনোয়ারুল আজিম সহ কর্মরত প্রায় অর্ধশত শ্রমিক, কর্মচারি ও কর্মকর্তাকে চিনিকলের অফিসার্স কলোনীর পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। ঐ দিনই গোপালপুর বাজারে ও গোপালপুর-লালপুর রাস্তায় আরও ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৯ মে খান সেনাদের একটি দল চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামে নদীর পাড়ে ধরে এনে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষ গুলি করে হত্যা করে। ২৫ জুলাই গোপালপুর থেকে ধরে এনে ২২ জনকে লালপুর নীলকুঠির নিকটে হত্যা করা হয় এবং ২৬ জুলাই একই স্থানে ৪ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। ২০ জুলাই রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও ৫ জনকে হত্যা করে। ৩০ জুলাই বিলমাড়িয়া হাট ঘেরাও করে বেপরোয়া গুলি বর্ষন করে ৫০/৬০ জনকে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাব পুলিশ ও খান সেনারা থানা ত্যাগ করে। ৯ তারিখে অধিকাংশ রাজাকারও থানা ত্যাগ করে। ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী থানা দখল করে । জনতা সেদিন উল্লাসে মেতে উঠে। কিন্তু হঠাৎ ১৩ ডিসেম্বর বর্বর খান সেনারা ঝটিকা আক্রমণ করে মহেশপুর গ্রামে ৩৬ জনকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর লালপুর এসএস পাইলট হাই স্কুল মাঠে এক বিজয় উৎসব, আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে লালপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন কর্ম সূচির মধ্য দিয়ে লালপুরে ১৩ ডিসেম্বর ‘লালপুর মুক্ত দিবস’ পালিত হয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top