logo
news image

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল এবং প্রতিকার

আব্দুল মতিন
রাত জাগার ভয়াবহ – ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক না কেন, ইদানিং রাত জাগাটা এক ধরনের ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন রাত জেগে কাজ করি আর ভোর হলে ঘুমাতে যাই।আমরা অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করতে পছন্দ করি৷
বিশাল কর্মব্যস্ততার এই ব্যস্ত নগরীতে আমরা এখন ভুলে যাই নিজেদের যত্ন নিতে। যার পরিণতি অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া সহ নানান জটিল
রোগে আক্রান্ত হওয়া৷
চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতের বেলা না ঘুমালে কিংবা কম ঘুমালে আমরা কী ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হই।
১) ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং আপনি বেশি খেতে শুরু করেন। যার পরিণতি হচ্ছে অবেসিটি বা স্থুলতা।  
২) স্ট্রোক করার ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
৩) টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪) মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
৫) ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।
৬) অ্যাসিডটি যেটা পরবর্তীতে পাকস্থলীতে আলসারে রূপ নেয়৷
৭) কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং কর্মচঞ্চলতা হ্রাস পায়।
৮) কোন ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায়।
৯) সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভুতি হয়৷
১০) গ্যামিট কম তৈরি হয়৷ ফলে রিপ্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায়।
১১) উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়।
১২) চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে৷
১৩) ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ত্বকের রঙ নষ্ট হয়ে যায়৷
১৪) চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
১৫) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়৷
১৬) সারকোপেনিয়া হবার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। সারকোপেনিয়া হলো এমন এক জটিলতা যাতে রোগি ধীরে ধীরে পেশী হারাতে থাকেন৷
১৭) নারীদের মাঝে মেদবহুল পেট এবং মেটাবলিক সিনড্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
১৮) স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারের কোষ দেহে গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে !
অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই৷ নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব সহজেই সুস্থ্য থাকা যায়৷ যাদের ঘুমের সমস্যা হয় অথবা রাতের বেলা আগে আগে ঘুমুতে পারেন না তাদের জন্য কিছু টিপস :
# ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে রাতের খাবার পর্ব চুকে ফেলুন৷
# অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করুন৷
# রাতের বেলা শোয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগেই সব ধরনের ইলেকট্রিক গ্যাজেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন৷
# হাতমুখ এবং পা ধুয়ে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে ঘুমানোর আগে # গোসল করে নিন। আর সুন্নাত হচ্ছে ঘুমের পুর্বে অযু করে ঘুমানো!
এক ঢিলে দুই পাখি, সওয়াবও পাচ্ছেন আবার ঘুমটাও চমৎকার হচ্ছে। বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তাইনা?
# বিছানায় শোয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন।
# শোয়ার ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। আর রাসুল (সা).-ও বলেছেন ঘুমানোর আগে বাতি নিঁভিয়ে ঘুমাতে।
# অনেকেরই জেনেটিক্যালি ঘুমের অসুবিধা থাকে।
যাদের এই ধরনের অসুবিধা আছে তারা অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরো বড় কথা “রাসুল সা. এর সুন্নত হচ্ছে এশার নামাজের পর যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে যাওয়া”,
তাহলে সওয়াবের ইচ্ছায় হলেও আমরা চেষ্টা করতে পারি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার, তাইনা?
সব সময় ফোন silent mode এ দিয়ে ঘুমাবা। আমি তাই করি। রাতে ঘুমের সময় হলে দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে ঘুম আমার কাছে মূল্যবান।

* আব্দুল মতিন: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, সাবেক জজ, সিবিইটি বৃত্তি সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top