মেলবোর্নে বাংলা স্কুলের এক যুগ পূর্তি অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)। ।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত বাংলা ভাষা শেখানোর বিদ্যালয় ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠার এক যুগ উদ্যাপন করেছে। মেলবোর্নে বসবাসকারী বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বাংলা ভাষা শেখানোর লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি রোববার নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে বিদ্যালয়টি।
এ দিকে যুগপূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার (৩ নভেম্বর) এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্কুলটি।
এক যুগ বা বারো বছর ধরে ভালোভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যেকোনো সংগঠনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবের ব্যাপার তা স্বদেশ কিংবা পরবাস যেখানেই হোক না কেন। আর যদি তা হয় মেলবোর্নের মতো ওয়েস্টার্ন কালচার সম্মৃদ্ধ জায়গায় তাহলে অবশ্যই তা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার।
‘ওয়েস্টার্ন রিজিওন বাংলা স্কুল” মেলবোর্নে একটি অতি পরিচিত সংগঠনের নাম বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে। সারা সপ্তাহ ব্যস্ততা শেষে প্রতি রোববার বাচ্চাদের মাঝে মায়ের ভাষা বাংলা শেখানোর প্রত্যয়ে ২০০৬ সালে কয়েকটি পরিবারের উদ্যোগে চালু হয়েছিল এই সংগঠন।
বাংলা কথা, বর্ণমালা “শেখানোর পাশাপাশি এই প্রজন্মের বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে পরিচিত বা বন্ধুত্ব করে নেয় এখানে এসে, আর পরিবারগুলো নিজেদের মাঝে জানাশোনার একটা প্লাটফর্ম হিসাবেও কাজ করছে এই বাংলা স্কুল।
দেখা যায় প্রতি রোববার এই বাংলা স্কুলে মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাংলা শেখানোর পাশাপাশি এর কার্যক্রম এখন আরও অন্য দিকে বিস্তৃত হয়েছে। হয়েছে ভিক্টোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি সংগঠন "ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশি কমিউনিটি ফাউন্ডেশন' বা ভিবিসিএফ।
যার মাধ্যমে বাংলা স্কুল ছাড়াও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে যেমন আরবি ক্লাস, আর্ট ক্লাস, প্রবাসী বাংলাভাষী সাংস্কৃতিক সংগঠন- প্রবাস ধ্বনি যেখানে বাচ্চা ও বড়রা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে থাকে।
আছে স্পোর্টস ক্লাব, যার মাধ্যমে প্রতি রোববার ব্যাডমিন্টন ও বিভিন্ন ইনডোর ও আউটডোর গেমসের টুর্নামেন্ট হচ্ছে সারা বছর ধরে। এছাড়া আছে ভিক্টোরিয়ান বাংলা মোবাইল লাইব্রেরি।
যেখানে নতুন-পুরাতন বাংলা বইয়ের সমাহার। এছাড়া বাংলাদেশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট ক্যাম্প মেলবোর্নে পরিচালনার সময় সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে ভিবিসিএফ।
গত দুই বছর ধরে এই সংগঠনের উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে পালিত হচ্ছে লোকাল সিটি কাউন্সিল ও অন্যান্য বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বা সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে।
মেলবোর্নে বসবাসরত অন্যান্য দেশের মানুষজনও এই সংগঠনের কার্যক্রমে জড়াচ্ছে। দিনকে দিন এর কার্যক্রম বাড়ছে, বাড়ছে জনসমাগম বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা আয়োজনগুলোতে।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এবছর "ওয়েস্টার্র্ন রিজিওন বাংলা স্কুল' তার প্রতিষ্ঠার ১২ বছর বা এক যুগে পদার্পন করলো। আর তাই ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ১২ বছর পূর্তি বেশ ঘটা করেই।
স্থানীয় সুজান কুরি হা ইস্কুলের আধুনিক মিলনায়তনে অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি জোয়ান রাইয়ান, বাংলা স্কুলের চিফ প্যাট্রন কামরুল চৌধুরী।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বে থাকা বাংলা স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ও ভিবিসিএফ, বাংলা স্কুল কাউন্সিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা।
ভিক্টোরিয়ায় এখন চলছে নির্বাচনী হওয়া ভিক্টোরিয়ান স্টেট ইলেকশনের। তাই অস্ট্রেলিয়ার বড় দুই দল, লেবার ও লিবারেলের স্থানীয় ও আশেপাশের নির্বাচনী এলাকার বেশ কয়েকজন প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন নিজেদের পরিচিত করানোর জন্য, ছিলেন বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। শারদ খন্দকার ও অনন্যা চক্রবর্তীর উপস্থাপনায় প্রথমে বাংলাদেশ ও পরে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বক্তৃতা করেন ভিবিসিএফ-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট নুসরাত ইসলাম বর্ষা ও বাংলা স্কুলের প্রিন্সিপাল অতি পরিচিত মুখ মোর্শেদ কামাল।
ভিবিসিএফ প্রেসিডেন্ট ও প্রিন্সিপাল এই সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলা শেখানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। বিভিন্ন কার্যকর্মে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এরপর শুরু হয় রকমারি আয়োজনে সম্মৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছোটদের ও বড়দের এই দুই পর্বে বিভক্ত আয়োজনে যেমন ছিল দেশাত্ববোধক গান, কবিতা আবৃতি, একক, দ্বৈত ও সম্মিলিত সংগীত, নাটিকা, নাচ, ফ্যাশন শো এ রকম নানা কিছু।
বিদেশ বিভুয়ে থেকে বড় ও ছোটদের এই প্রয়াস উপস্থিত সকলের প্রশংসা অর্জন করে। সাংস্কৃতিক পর্বের উপস্থাপনায় ছিলেন জাহিদ মজুমদার। বেশ কয়েক পর্বে বিভক্ত ক্রেস্ট প্রদান পর্বে অতিথি, স্পনসরবৃন্দ, এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যবৃন্দ, বাংলা স্কুল ও প্রবাস-ধ্বনির টিচার ও ট্রেইনার, সাব-কমিটির সদস্যবৃন্দ, ক্ষুদে ও বড় শিল্পী এবং ভলান্টিয়ারদের মধ্যে ক্রেস্ট ও মেডেল বিতরণ করা হয়।
এই পর্বের উপস্থাপনা ও অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন নুরুল ইসলাম মানিক, ইউসুফ আলী, রাকিব দেওয়ান, ইফতি, রিপন, জামিল ও পলাশ। পুরো প্রোগ্রামের সাউন্ড সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন মোশারফ হোসেন রেহান ও মিজানূর রহমান। এছাড়াও রকমারি মুখরোচক দেশি খাবার নিয়ে ছিল ফুড স্টল, সারা সন্ধ্যা সেখানেও ছিল ভিড়।
এরকম একটি বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের পিছনে বাংলাদেশি কমিউনিটি বিশেষত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা অত্যন্ত দরকার আর তারাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাধ্যানুযায়ী।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে তাদের ও সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলের মধ্যে নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।
সাম্প্রতিক মন্তব্য