logo
news image

নাজমুনের হাত ধরে এখন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, লন্ডন (যুক্তরাজ্য)।  ।  
নাজমুনের হাত ধরে বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে। ‘ফ্লাগ গার্ল’খ্যাত বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুন নাহারের হাত ধরে পৃথিবীর ১১০টি দেশের সীমানা ছুঁয়েছে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। ছুঁয়েছে পৃথিবীর বহু পর্বতশৃঙ্গ, নগর, বন্দর, সমুদ্র হতে সমুদ্র। এই পতাকা ছুঁয়েছে পৃথিবীর হাজারো মানুষের হৃদয়’।
রোববার (৪ নভেম্বর) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের একটি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের ১১০টি দেশে পদচিহ্ন রাখা নাজমুন নাহারকে নিয়ে সত্যবাণী আয়োজিত এক মিডিয়া আড্ডায় এমন মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের বাংলা সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা।
সত্যবাণীর উপদেষ্ঠা সম্পাদক আবু মুসা হাসানের সভাপতিত্বে ও প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মিডিয়া আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, দ্যা ডেইলী এশিয়ান এইজ-এডিটর ইন চার্য ও সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সৈয়দ বদরুল আহসান, সত্যবাণীর এডিটর এট লার্জ মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, বার্তা সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমীন, সিনিয়র সাংবাদিক সাপ্তাহিক পত্রিকার হামিদ মোহাম্মদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন’র ইউরোপ ব্যুরো চীফ ও প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার আ স ম মাসুম, সহকারী ব্যুরো চীফ আফজাল হোসেন, এটিএন বাংলা’র মোস্তাক বাবুল, কালের কন্ঠের লন্ডন প্রতিনিধি জুয়েল রাজ, সাপ্তাহিক সুরমার আহমেদ ময়েজ, সাপ্তাহিক জনমতে’র বিশ্বজিত রায় অপু, গণজাগরণ মঞ্চের অজন্তা দেব রায়, এনটিভি ইউরোপের রাজিব হাসান, ইউকে বিডি টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক আমিমুল আহসান তানিম, চ্যানেল এস’র রেজাউল করিম মৃধা ও যুবনেতা জামাল খান প্রমূখ।
আড্ডায় নাজমুন নাহার লাল সবুজের পতাকা হাতে বিশ্বব্যাপী ছুটে চলার তাঁর এডভেঞ্চারের গল্প শোনান বিলেতের বাংলা মিডিয়া কর্মীদের। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পতাকা হাতে পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হাঁটিনি,  আমার সাথে হেঁটেছে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ,  মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা”। তিনি বলেন, “এই এডভেঞ্চারের প্রতিটি মুহূর্তেই আমি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের এই লাল সবুজ পতাকা। স্মরণ করেছি তাদের, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন পতাকা তলে বেড়ে উঠেছি আমরা”।
নাজমুন বলেন, ”লাল সবুজের এই পতাকা ভাবনা আমার কাছে দেশপ্রেমের একটি চিহ্ন,  একটি শিহরণ, একটি উচ্ছাস, একটি আবেগ। এই পতাকাকে অর্জনের জন্য প্রাণ হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। হারানো প্রাণ আর রক্তে অর্জিত এই পতাকার সম্মান যেন সমুন্নত থাকে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে, তাই আমি এই পতাকা নিয়ে হাটছি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।”
তিনি বলেন, লাল সবুজের পতাকা হাতে পৃথিবীর পথে পথে হাঁটতে গিয়ে মৃত্যুকেও খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি। পেরুর পাহাড়ে উঠতে গিয়ে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে গাইড বললো আমাকে আর নেয়া যাবেনা, কারন এই মুহূর্তে মারা গেলে মরদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়ার মত ব্যবস্থা নেই তাদের কাছে। এর উত্তরে আমি বলেছিলাম, মরলে লাল সবুজের এই পতাকা জড়িয়ে আমার মরদেহ এখানেই রেখে যেও তুমরা, তবুও আমি যাবো”।
নাজমুন বলেন, “যে পতাকা ছুঁয়েছে পৃথিবীর বহু পর্বতশৃঙ্গ, নগর, বন্দর, সমুদ্র হতে সমুদ্র, যে পতাকা ছুঁয়েছে পৃথিবীর হাজারো মানুষের হৃদয়, সে পতাকা যাবে বিশ্বময়। আমি স্বাধীনতা অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেখিনি। আমি একটি স্বাধীন দেশের পতাকা তলে বেড়ে উঠেছি”।
‘ফ্লাগ গার্ল’ খ্যাত নাজমুন নাহারের মন্তব্য, “’আমরা সবাই একই পৃথিবীর মানুষ, একই সূত্রে গাঁথা। একই শেকড় থেকে আমাদের জন্ম, একই সূর্যের আলো পাই, একই আকাশের নিচে বসবাস করি। আমরা একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমাদের ধর্ম, বর্ণ, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সব কিছু ভুলে গিয়ে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজের কথা ভাবতে হবে। এই বার্তা সবার কাছে পৌছে দিতেই আমি হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে”।
নাজমুন জানান, ২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তার প্রথম বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়। সে সময় তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমন। সেখানে বিশ্বের আশিটি দেশের তরুণ তরণীদের সামনে প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। নাজমুন বলেন, “সেই থেকেই বাংলাদেশের পতাকা হাতে আমার বিশ্ব যাত্রার শুরু”।
নিজের দেয়া তথ্যমতে ২০১৮ সালের ১লা জুন একশ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন  নাজমুন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে সফরের মাধ্যমে। বাংলাদেশের পতাকা হাতে জাম্বিয়ার সীমান্তবর্তী লিভিংস্টোন শহরে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ব্রিজের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে তিনি জিম্বাবুয়ে প্রবেশ করেন। ইতিহাসে নাজমুনের শততম দেশ ভ্রমণের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, যে জলপ্রপাতটির অর্ধেক  জাম্বিয়ায়, বাকি অর্ধেক বহমান জিম্বাবুয়েতে।
নাজমুনের এই সফরকে কেন্দ্র করে জাম্বিয়াতে তখন ব্যাপক আলোড়ন হয়। জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়েনা বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুন নাহারকে দেন ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি। ঐসময় ‘জাম্বিয়া ডেইলি মেইল’ এর বিশেষ ক্রোড়পত্রে ৩ জুন ২০১৮ প্রকাশিত হয় একটি ফিচার স্টোরি। খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্গারেট সামুলেলা তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন নাজমুনের জীবনদর্শন, বাংলাদেশের পতাকার সম্মান, ভ্রমন মাইলফলকের কাহিনী ও তার মোটিভেশনাল কার্যক্রমের কথা।
আড্ডায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, ‘নাজমুন নাহারের এডভেঞ্চারের গল্প আমাদের মেয়েদের সাহসি করে তুলবে’।
সৈয়দ বদরুল আহসানের মন্তব্য, ‘দেশপ্রেম বুকে থাকলে যেকোন ঝুঁকি নেয়া যায়, নাজমুনের এডভেঞ্চার গল্পে তাই ফুটে উঠেছে’।
নাজমুন এই প্রজন্মের আইকন, এমন মন্তব্য করে সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার বলেন , ‘লাল সবুজের পতাকা হাতে নাজমুনের বিশ্ব জয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে থাকবে’।
আড্ডার সভাপতি আবু মুসা হাসানের মতে, নাজমুন নাহারের অদম্য সাহস ও উৎসাহে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপি। নাজমুনের হাত ধরে লাল সবুজের পতাকা অবিরত উড়ছে বিশ্বের দেশে দেশে।
আড্ডায় ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া হাতে তুলে দিয়ে এডভেঞ্চার কন্যা নাজমুন নাহারকে অভিনন্দিত করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা। বিপরিতে  লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও আড্ডা আয়োজক সত্যবাণীর হাতে সুভ্যেনির তুলে দেন ‘ফ্লাগ গার্ল’ নাজমুন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top