logo
news image

হিলি স্থলবন্দরে তীর্থযাত্রিদের বাস ভাংচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি (দিনাজপুর)।  ।  
সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারসহ ৮দফা দাবীতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ঘন্টা ধর্মঘটের প্রভাবে পড়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। বন্দর দিয়ে দুদেশের মাঝে আমদানি রফতানি বানিজ্য স্বাভাবিক থাকলেও বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এদিকে হিলি থেকে দেশের সকল রুটে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারন যাত্রিরা। এদিকে তীর্থযাত্রিদের একটি বাস ভাংচুর করেছে শ্রমিকরা, এতে বাসের ৩যাত্রি আহত হয়েছে।
রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়, সিপিরোডসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়কে পিকেটিং করছে, সড়কে যান চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এতে করে সড়কে কোন ধরনের যানবহন চলাচল করছেনা এমনকি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকও সড়কে চলতে দিচ্ছেনা। হিলি থেকে রাজধানী ঢাকা, আন্তজেলাসহ দেশের সকল রুটে যাত্রিবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সাধারন যাত্রিরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে দেশে ফেরা যাত্রিরা বাস না পেয়ে চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। ছোট ছোট যানবহনে করে গন্তব্যে পৌছতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ধর্মঘটের কারনে বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে বিরামপুর উপজেলা থেকে চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডে তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া হিন্দূ ধর্মাবলম্বীদের একটি বাস হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে আসলে শ্রমিকরা বাসে হামলা চালিয়ে বাস ভাংচুর করে। এতে বাসের গøাসসহ বাসে থাকা ৩জন যাত্রির হাত কেটে যায়। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে বাস ও তীর্থযাত্রিদের উদ্ধার করে গন্তব্যে না গিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
তীর্থযাত্রিরা জানান, আমরা আজ বেশ কয়েকজন বিরামপুর থেকে চট্টগ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে বাসযোগে রওয়ানা হয়েছিলাম। বাসটি হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় একদল শ্রমিক এসে বাসে ভাংচুর চালায়, এতে আমাদের কয়েকজন যাত্রি আহত হয় ও আমাদের বাসের গøাস ভেঙ্গে ফেলে তারা। এর ফলে আমরা তীর্থযাত্রায় যেতে পারলামনা। তবে আমরা গ্রামের মানুষ তাদের এ ধর্মঘটের কথা জানতামনা।
ভারত থেকে দেশে ফেরা আব্দুর রহিম নামের এক পাসপোর্ট যাত্রি জানান, ভারতের চেন্নাইতে চিকিৎসা শেষে আজ সকালে দেশে ফিরে জানতে পারি দেশে পরিবহন ধর্মঘটের কথা। আমি যাবো সিরাজগঞ্জে এখন গন্তব্যে পৌছতে বাস না পেয়ে আটকা পড়েছি এখন বিকল্প উপায়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি। এর পরেও ভ্যান বা অটোতে করে ভেঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু তাতেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ ট্রেন যোগে বা ছোট ছোট যানবাহনে করে গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করছে।
জোসনা বেগম নামের অপর এক যাত্রি জানান, আমার মা মারা গেছে আমি সেখানে যেতে পারছিনা। ধর্মঘটের কারনে আমি যে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক নিয়ে এসেছি সেটিও শ্রমিকরা আটকে দিয়েছে এতে করে আমি গন্তব্যে যেতে পারছিনা।
দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন হিলি বাসষ্টান্ড শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, শ্রমিকদের আটদফা দাবী আদায়ের এই আন্দোলন, এই আট দফার মধ্যে যেগুলো দফা রয়েছে সেগুলো সুষ্পষ্ট করে দেওয়া আছে। এই দফাগুলো শ্রমিক স্বার্থ যেন সংরক্ষন হয় এই জন্যই আমাদের এই আন্দোলন, একারনে ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে আমাদের। এর মধ্যে আমাদের উদ্ধর্তন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ সরকারের সাথে হয়তোবা বসবেন বসলে একটা সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি সে ক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলন আমরা প্রত্যাহার করে নিবো।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রæপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন জানান, বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বানিজ্য স্বাভাবিক থাকলেও পরিবহন ধর্মঘটের কারনে ট্রাক না পাওয়া যাওয়ায় ঢাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পাঠানো যাচ্ছেনা। এর ফলে বিশেষ করে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছি আমরা।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, সারাদেশ ব্যাপী পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে হিলি স্থলবন্দরে। ধর্মঘটের কারনে বন্দরের ভেতর থেকে কোন ধরনের মালামাল দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো যাচ্ছেনা। তবে বন্দর দিয়ে ভারত হতে পণ্য আমদানি ও রফতানি বানিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বন্দর থেকে স্থানীয় কিছু আমদানিকারকদের পণ্য সরবরাহ চালু রয়েছে। ধর্মঘটের কারনে বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহন না করার কারনে বন্দরের ভেতরে সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অচিরেই এর সমাধান না হলে আমরা বড় ধরনের যানজটের সন্মুক্ষিন হবো বলে মনে করছি।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top