logo
news image

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জিন্নাতের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  ।  
বুধবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে জিন্নাত আলীকে কক্সবাজার-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাইমুর সরওয়ার কমল তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করানোর জন্য নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা। বর্তমানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন ও ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে সংসদের ক্যান্টিনে গেলে তার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ভিড় করেন মন্ত্রী-এমপিরা। সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাকে ঘিরে ধরেন ও ছবি তোলেন। তবে সাধারণ লোকের সঙ্গে ছবি তোলার সময় তিনি টাকা দাবি করলেও মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে বিনা বাক্যব্যয়ে ছবি তোলেন।
এ সময় জিন্নাতকে দেখতে সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, তথ্য ও যোগযোগ প্রতিমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি ভিড় জমান। তার সঙ্গে ছবিও তোলেন।
পরে এমপি সায়মুম সরোয়ার কমল বলেন, ‘জিন্নাত আলী নানা রোগে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার উপযোগী করে একটি বাড়ি করে দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।’
তবে সাংবাদিকরা জিন্নাত আলীর ছবি নেয়ার জন্য দাঁড়াতে বললে টাকা দাবি করেন তিনি। সবাই টাকা না দিলে ছবি তুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক আমাকে নিয়ে নিউজ করে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু আমার কিছুই হয়নি!’
পরে ক্যান্টিন থেকে চলে যাওয়ার সময় তার ছবি নেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গিনেস রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ ব্যক্তি হলেন মিশরের সুলতান কসেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। আর মাত্র ২২ বছর বয়সেই জিন্নাত আলীর উচ্চতা ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি। তবে সর্বকালের রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মানুষ ছিলেন রবার্ট পারশিং ওয়েডলো। তিনি ছিলেন ৮ ফুট ১১ ইঞ্চি লম্বা। ১৯১৮ সালে ২২ ফেব্রুয়ারী জন্ম নেওয়া এই মার্কিনী মারা যান ১৯৬৯ সালে।
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিন্নাত আলী সেজো। অতি উচ্চতার কারণে শোয়া, বসা ও হাঁটাচলা করতে হয় ঘরেই। এছাড়া খাবার চাহিদাও তার বেশি। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মা তাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারে না। ফলে অপুষ্টিসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত সে। গত সোমবার তাকে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমামের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের কেবিন ব্লকে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডি বিল্ডিংয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তবে চিকিৎসকরা এখনও তার রোগ শনাক্ত করতে পারেননি।
তবে ৫ বছর আগে জিন্নাত আলীকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সে সময় তার রোগটিকে জাইগানটিজম বলে শনাক্ত করা হয়। জাইগানটিজম একটি টিউমার সংক্রান্ত রোগ। শরীরের অভ্যন্তরে টিউমারের প্রভাবে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হয়। ফলে শরীরের আকৃতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করে আক্রান্ত স্থান থেকে টিউমারটি অপসারণ করতে পারলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এ রোগ থেকে। এ টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করতে ৫ লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিল চিকিৎসকরা। টাকার অভাবে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করাতে না পেরে ওই সময় হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বর্তমানে জিন্নাতের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য গত বছর স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে আবারও ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরে এলাকার ছেলেরা তার ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে তা স্থানীয় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের নজরে আসে। তিনিই তার চিকিৎসা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। তার পরামর্শেই এই হাসপাতালে জিন্নাতকে ভর্তি করানো হয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top