logo
news image

সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট।  ।  
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি‌তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ক্ষমতার মালিক আমরা হব। বিজয় আমাদের অনিবার্য।’
বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা রেজিস্টারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশ আজকে স্বৈরাচারের কবলে পড়েছে। এখান থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল জনগণ ক্ষমতার মালিক হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি, রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক আমরা হব।’
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, কার উন্নয়ন হয়েছে? গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়ন হয়েছে, যারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করছে।’
সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কষ্ট করে মাঠে নেমেছেন। মাঠে থাকবেন তো! অনেকে বলে আমরা মাঠে নেই।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানে ক্ষমতার মালিক জনগণ উল্লেখ থাকলেও আদতে এর মালিকানা জনগণের নেই। এ মালিকানা পুনরুদ্ধারের জন্য দেশে সত্যিকারের নির্বাচন হতে হবে। জনসাধারণের ভোটের অধিকারের জন্য সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
কামাল বলেন, ‘আমরা জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনতে মাঠে নেমেছি। এর জন্য দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করেছি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আবারও দেশের মালিক হব।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ, মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। আজ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রা শুরু হলো। নতুন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তফসিলের আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএম চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেওয়া হবে না। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়নধর্মী রাষ্ট্র গঠন করা।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে সামনে রেখে বেলা ১টা থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে থাকেন। বেলা আড়াইটার দিকে লাঠিচার্জ করা হয়। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হন। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঠে। নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করলে মঞ্চ থেকে নেতারা মাইকে পুলিশকে লাঠিচার্জ না করার আহ্বান জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমাবেশস্থলসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নজরদারি করা হয়।
অবশেষে সিলেটে সমাবেশ করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বাধা অতিক্রম করে আত্মপ্রকাশের ১১ দিনের মাথায় প্রথম সাংগঠনিক সমাবেশ করছে তারা। বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐকের সমন্বয়ে গঠিত ফ্রন্টের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিলেটের তালতলা ভিআইপি রোডের পাশে জেলা রেজিস্ট্রারি মাঠে। বুধবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের যে মাঠে ফ্রন্টের সমাবেশ হচ্ছে সেখানে হাজারখানেকের বেশি মানুষের জড়ো হওয়ার জায়গা নেই। তবে সমাবেশের লোক মাঠ ছাপিয়ে রাস্তায় ছাড়িয়ে গেছে। ফলে তালতলা, বন্দর, কিন ব্রিজ এলাকায় গাড়ির জট ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্রন্টের নেতারা দাবি করছেন, হাজার হাজার মানুষ জড়ো হচ্ছেন সমাবেশে।
বুধবার দুপুর ১টার পর থেকে শত শত নেতাকর্মীদের মিছিল একে একে প্রবেশ করতে থাকে রেজিস্ট্রারি মাঠে। তবে শুরু থেকেই যেন ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশ হয়ে ওঠেছে বিএনপির সমাবেশ। মঞ্চ থেকে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে রাস্তা, সবখানেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান। সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েছে। সমাবেশস্থলের প্রবেশপথে ও সামনের সড়কে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
দুপুর ২টার দিকে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাহের শামীমের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা শুরু হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে নেতারা বক্তব্য রাখছেন। সবার বক্তব্যেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি উঠে আসছে।
বেলা আড়াইটা দিকে মঞ্চে ওঠেন সমাবেশের সভাপতি ও সিলেটের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুলতান মো. মনসুর, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, তানিয়া রব, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতাও। ইতোমধ্যে জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, জমিয়ত কাসেমী অংশের সহসভাপতি শাহীনুর পাশা চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ।
উল্লেখ্য ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২৩ অক্টোবর সিলেটে প্রথম সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর অনুমতি নিতে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে দেখা করে লিখিত আবেদন জমা দেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় বিএনপির ওই প্রতিনিধি দল ২৪ অক্টোবর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পৃথক আরেকটি আবেদন পত্র জমা দেন। এরপর অনুমতি না পেয়ে ২১ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই দিন বিকালেই পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top