শারদীয় দুর্গাপূজায় হিলি সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি (দিনাজপুর)
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের চেকপোষ্ট গেট এলাকা ভারত ও বাংলাদেশের দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের পদচারনায় মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। সীমান্তের শূন্যরেখার দুপারে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। এদের কেউবা পুজা দেখতে, আবার কেউবা তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে পাসপোর্টেও দুদেশের মাঝে যাত্রি পারাপারের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেট, মাইক্রোবাস, পিকআপে করে দর্শনার্থা ও ভক্তরা আসছেন হিলি সীমান্তে। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরেও তাদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন বাংলাদেশের পূজা দেখতে। সীমান্তে কাটা তারের বেড়া এবং বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর মনোভাবের কারনে এপার থেকে ওপারে পুজো দেখতে পার হতে না পারলেও সীমান্তের শূন্যরেখার দুই পার্শ্বে দাড়িয়ে ভারত ও বাংলাদেশের দর্শনার্র্থীরা একে অপরকে দেখে ও সীমান্তের শুন্য রেখায় ছবি তুলে মনের দুঃখটাকে আনন্দে পরিনত করছেন তারা। হিলি সীমান্তে আসা দর্শনার্থীরা জানান, সীমান্তে তারকাটার বেড়া দিয়ে দু দেশের দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও আমাদের মনকে তো আর ভাগ করতে পারেনি, আগেতো দুই বাংলা একই ছিলো। তাই তারা ভালোবাসার টানে, প্রানের টানে, নারীর টানে ছুটে এসেছি সীমান্তে। এছাড়া আমাদের অনেক আত্নীয় স্বজন রয়েছে ভারতে আবার তাদেরও অনেক আত্নীয় স্বজন রয়েছে আমাদের দেশে। তাই দীর্ঘ দিন পর সীমান্তে এসব আত্নীয় স্বজনকে কাছে দেখতে পেয়ে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছি। তবে অনেকের বাংলাদেশ থেকে ভারতে আবার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও কেবলমাত্র যাদের পাসপোর্ট ভিসা রয়েছে শুধুমাত্র তারাই সীমান্তের এপার ওপার করছেন। আর যাদের পাসপোর্ট নেই তারা দুর থেকে তাদের আত্নীয় স্বজনদের দেখছেন। তবে তাদের দাবী যদি কোনভাবে একটু ভিতরে যেতে দিতো তাহলে ভিতরে গিয়ে প্রতিমা দেখতে পারতাম এছাড়া সকলের সাথে দেখা করতে পারতাম এবং তাদের সাথে মন খূলে কথা বলতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে যাওয়ার অনুরোধ করছেন সীমান্তরক্ষীদের কাছে। অনেকের অনুরোধ রক্ষা করছেন দুই দেশের সীমান্ত রক্ষি বাহিনীগুলি। প্রতিবছর পুজার সময় আসলেয় দু-দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন হিলি সীমান্তে, ভারতীয় দর্শনাথীদের ইচ্ছে বাংলার পূজা দেখা, আর বাংলার
দর্শনার্থীদের ইচ্ছে ভারতের পুজা দেখা। সব মিলিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে হিলি সীমান্ত পরিনত হয়েছে মিলন মেলায়। হিলি সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্টে ভারতে যাওয়া এক নারী জানান, আমি হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পূজা দেখতে যাচ্ছি। আমাদের দেশের চেয়ে ভারতের পূজাগুলো অনেক ভালো ও সুন্দর হয় একারনেই ভারতে যাচ্ছি। এরকম অনেক যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে আবার অনেক যাত্রি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছেন পূজা দেখতে ও আত্নীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে। বিজিবির হিলি আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার এটি এম মোস্তফা জানান, শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ হিলি সীমান্তে আসছেন। আবার অনেকে ভারতে তাদের আত্নীয় স্বজনের সাথে দেখা করছেন আবার কেউবা সীমান্তের শূন্যরেখা ঘূরে দেখছেন। একইভাবে ভারত থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আসছেন সীমান্ত দেখতে। নিয়মের মধ্যে থেকে যতদুর সম্ভব তাদের আবদার রক্ষা করা হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও বিকেলে এর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট ওসি আব্দুস সবুর জানান, হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারত থেকে অনেক হিন্দূ ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের পূজা দেখতে আসছেন। আবার অনেকের আত্নীয়ের বাড়ি রয়েছে বাংলাদেশে সে কারনেও তারা বাংলাদেশে পূজা করতে আসছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকেও অনেক যাত্রী ভারতে পূজা দেখতে এবং তাদের আত্নীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। একারনে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। হিলি স্থল শুল্কস্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাকের আহম্মেদ জানান, শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার আগের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে, একটা উৎসব মুখর পরিবেশ, আত্নীয়তার বন্ধন, দুবাংলার একটা মিলন মেলা এর কারনে পাসপোর্টে যাত্রি পারাপারের সংখ্যা বেড়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয়ও খানিকটা বেড়েছে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য