logo
news image

শাবি ক্যাম্পাসে চা বাগান

মোয়াজ্জেম আফরান
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে। শুরুতেই বিভাগে যোগ দেন অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক। শিক্ষার্থীদের দক্ষ প্রকৌশলী ও গবেষক হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর মনে আসে নতুন এক ভাবনা। ক্যাম্পাসের টিলার ওপর চা বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। সহকর্মীদের সম্মতি নিয়ে আবেদন জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। ২০১৩ সালে মেলে অনুমোদন। টিলাবেষ্টিত সৈয়দ মুজতবা আলী হলের পাশে দেওয়া হয় জায়গা বরাদ্দ। এরপর বাগান করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। ০.০৬১ হেক্টর (৬১০ বর্গমিটার) জায়গায় শুরু হয় বাগান তৈরির কাজ। মাটি উপযুক্তকরণ, চারা রোপণ, বেড়া নির্মাণ, পরিচর্চা—সব কাজে হাতে হাত রেখে শ্রম দেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিকভাবে রোপণ করা হয় বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) ও স্থানীয় বাগান থেকে পাওয়া ৩০০ চারা। ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট বাগান তৈরির এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তখনকার বিভাগীয় প্রধান ড. মোজাম্মেল হক। অন্যদিকে গত বছরের ১৪ মে বাগানের আনুষ্ঠানিক উন্নয়নকার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়া। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মমতায় ক্যাম্পাসেই গড়ে উঠেছে একখণ্ড চা বাগান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা দেশের প্রথম ও একমাত্র এ চা বাগান।  
এই চা বাগানে এখন দেড় হাজার গাছের সমাহারে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। এফইটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের প্রাথমিক উপাদান মূলত এ বাগান থেকেই সংগ্রহ করা হয়। চারা রোপণ, গাছের পরিচর্চা, পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাতা থেকে চা তৈরি, গাছের রোগ নির্ণয় ও বিভিন্ন নিরীক্ষার জন্য এটি স্বয়ং একটি অন্য রকম গবেষণা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বাগান তৈরির ভাবনা সম্পর্কে ড. মোজাম্মেল জানান, ‘চা নিয়ে কাজ করা এ বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গবেষণা, ফিল্ড ওয়ার্ক ও ব্যাবহারিক কাজকর্মের জন্য এতদিন আমাদের শিক্ষার্থীদের অন্য বাগানগুলোর ওপর নির্ভর করতে হতো। এতে সময় ও অর্থ—দুটোই ব্যয় হতো অনেক। এ কারণে ক্যাম্পাসেই চা বাগান তৈরির প্রয়োজন আমি উপলব্ধি করেছিলাম।’
এই তো সেদিন সকালের হালকা মিষ্টি রোদে যখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে সূর্য, হঠাৎ সমতল থেকে চোখ পড়ল উঁচু-নিচু টিলার দিকে। কৌতূহল নিয়ে কাছে যেতেই ৪০ জন শিক্ষার্থীর দেখা পেলাম। এঁরা এফইটি বিভাগের তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়েন। প্রত্যেকের হাতে বিভিন্ন যান্ত্রিক উপকরণ। এগুলো দিয়ে তারা চা বাগানের পরিচর্চা, সার প্রয়োগ, সেচ দেওয়া প্রভৃতি কাজ হাতে-কলমে শিখছেন। শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে দেখা গেল, প্রুনিং মেশিন দিয়ে চা পাতার বাড়তি অংশ সমানভাবে ছেঁটে ফেলছেন। তাদের একজন, মো. সালাউদ্দিন গাছের গোড়ায় দিচ্ছেন পানি। সার দিতে দেখা গেল সানিয়া আফরিনকে। চা বাগানটি তৈরিতে ভূমিকা রাখা প্রভাষক মো. শাফায়েত আহমেদ শুভ জানালেন, ‘সম্পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা না পেলেও প্রাথমিক কাজগুলো আমরা এখান থেকেই সারতে পারছি।’
বৃহৎ পরিসরে গবেষণার ক্ষেত্রে এই চা বাগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ বাগানের তত্ত্বাবধায়ক ও এফইটি বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এ খাতে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা বাজেট পেলে বাগান সম্প্রসারণ ও কর্মপরিধি বাড়ানো যাবে।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top