logo
news image

খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছে লালপুরের গাছিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শীত আসলেই প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল জুঁড়ে শুরু হয় গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন ঠিলে-খুংগি-দড়া-গাছি দাঁ বালিধরাসহ ইত্যাদি তৈরীর অবিরাম প্রস্তুতি। বেড়ে যায় গাছিদের ব্যস্ততা। আবহমান বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও ব্যাবস্ততা বেড়ে যায় দিগুন। মৌসুমের শুরুতে আলতো শীতের সোনালী সূর্য্যরে রোদেলা সকালে গাছিরা বাঁশের ডগা দিয়ে নলি তৈরীতে ব্যাস্ত সময় পার করেন। কেউবা আবার পাটের আশ দিয়ে দড়া তৈরীতে মগ্ন। বেলা বাড়তেই ঠিলে-খুংগি-দড়া- গাছি দাঁ বালিধরা নিয়ে গাছিরা ছুটে চলে গাছ কাটতে। আবার ভোরে উঠে রস নামাতে কুয়াশা ভেদ করে চড়ে বেড়ায় এক গাছ থেকে আরেক গাছে। এর পর ব্যাবস্থা বাড়ে মেয়েদের সকাল থেকে দুপুর অবধি কোন ফুসরত নেই দম ফেলার। মাটির তৈরী কড়াই অথবা এ্যালমুনিয়ামের কড়াইতে রস জালিযে গুড় তৈরী করতে সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত সময় লাগে। জিরেন রস দিয়ে দানাগুড় অথবা (ছিন্নি, পাটালী) তৈরী হয়। ঘোলা রস দিয়ে তৈরী হয় ঝুলা গুড়।
শরতের শুরুতেই নাটোরের লালপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি খেজুরের রস সংগ্রহের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগাম গাছ ঝুড়ার কাজ শুরু করছে গাছিরা। যদিও এই মধুবৃক্ষের রস ও গুড় তৈরী হয়ে থাকে শীতকালে। তবুও আগাম এই মধুবৃক্ষের রস ও গুড় তৈরী করতে ও অধিক দামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অনেক কৃষকই আগাম খেজুরের গাছ ঝুড়তে শুরু করেছেন।
উপজেলার লালপুর, মোহরকয়া, বিলমাড়িয়া, ওয়ালিয়া, ধুপইল, ফুলবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় অনেক গাছিই খেজুরের গাছ ঝুড়ছেন।
ব্যস্ত গাছিরা বলেন, সময় না হলেও আমরা একটু আগামই গাছ ঝুড়ছি কারণ এ বছর আবহাওয়া অনুকলেই রয়েছে। তাছাড়াও আগাম রস নামাতে পারলে বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাবে। আর ১৫-২০ দিন পর থেকে এই সকল খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও রস থেকে পাটালী গুড় তৈরী করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি। সকাল থেকে শুরু হয় মধুবৃক্ষ খেজুরের গাছ ঝুড়ার কাজ। কয়েক দিন পরেই এ সকল গাছ থেকে শুরু হবে রস সংগ্রহ।এই মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। গাছিরা খেজুর গাছের মাথার কাছাকাছি জায়গায় থেকে ডাল কেটে মাথা চেঁচে কয়েকদিন শুকিয়ে নেয়।
তারপর ওই জায়গায় এক বিশেষ প্রক্রিয়াতে গাছ কেটে রস বের করে আর সেই রস হাঁড়িতে নেওয়ার জন্য সেখানে গুজ-পাতাড়ি মারে। এই রস আগুনে জাল করে তৈরি করা হয় পাটালী, দানাদার ও ঝোলা গুড়। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের মিস্টি, পিঠা-পুলি, ক্ষির ও পায়েস।
কিছু দিনের মধ্যে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাঠালি গুড়। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালী উৎপাদনে লালপুর উপজেলার সুনাম রয়েছে।যা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।
কতিপয় অসাধু মুনাফালোভী ভেজাল গুড় উৎপাদনকারিদের কারণে এই ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার পরিবারে উপার্জন খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, উপজেলায় কোন অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল খেজুরের গুড় উৎপাদন করতে না পারে সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে আছে। পাশাপাশি ভেজাল গুড় উৎপাদন রোধে প্রয়োজনীয় মোবাইল কোর্ট পরিচাল কারা হবে বলে জানান তিনি।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুল ইসলাম খাঁন বলেন, খেজুরের গাছ এই উপজেলায় অন্যতম সম্পদ যা রক্ষার্তে কৃষি অফিস থেকে কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top