logo
news image

৩০ মার্চ ময়নার যুদ্ধ দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক।  ।  
৩০ মার্চ নাটোরের লালপুরের ময়নার যুদ্ধ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সম্মুখ যুদ্ধে সাঁওতাল তীরন্দাজসহ ৪০জন বাঙ্গালি শহীদ হন। মুক্তি পাগল জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর হাতে পর্যুদস্তু হয়ে ২৫ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ধ্বংস হয়।
ময়না জনযুদ্ধ দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, ২৫ মার্চ রাতে ১৩০ জনের ২৫ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পাবনাতে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। মুক্তি বাহিনী ও জনতার প্রতিরোধে ৮০ জন পাক সেনা নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। পর্যদস্তু বাহিনী রাজশাহী ব্যাটালিয়ান হেড কোয়ার্টারে সাহায্য চাওয়ায় মেজর রাজা আসলাম প্রচুর সৈন্য ও ভারী অস্ত্রসহ পাবনায় পৌঁছে। এর পরও অবস্থা বেগতিক দেখে তারা রাজশাহীর দিকে রওনা দেয়। কিন্তু নাটোরে ছাত্র-জনতার রাস্তা প্রতিরোধের সংবাদ পেয়ে তারা ঈশ্বরদী অভিমুখে যেতে থাকে। পথিমধ্যে দাশুরিয়া নামক স্থানে বিশাল জনতার কাছে মার খেয়ে বনপাড়া-লালপুর হয়ে ঈশ্বরদী পৌঁছার সিদ্ধান্ত নেয়। নাটোর জেলার ধানাইদহে এসে জনতার ভেঙ্গে ফেলা ব্রিজে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নিরুপায় হয়ে তারা  ধানাইদহের কাছের লালপুর অভিমুখী কাঁচা রাস্তা দিয়ে রওনা হয়। ওই সময় গোপালপুর রেল গেটের রেল লাইনের  মালবাহী ওয়াগন দিয়ে সৃষ্ট ব্যারিকেডে পূনরায় বাধা প্রাপ্ত হয়। সেনারা স্টেশন মাষ্টারকে ওয়াগনটি হটাতে বললে অপারগতা প্রকাশ করায় তার এক পুত্রকে গুলি করে হত্যা করে এবং একদফা হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এদিকে হাজার হাজার জনতা ও সাঁওতাল শ্রমিকরা তাদের ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে সেনারা তিনটি জীপ ও ছয়টি ট্রাকের বহর নিয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে পালাতে থাকে। এই রাস্তায় মাঝখানের খালের মধ্যে মুক্তি বাহিনী অবস্থান নিলে পাক সেনারা সেখানে ছয় জনকে হত্যা করে খাল পার হয়ে যায়। সেনারা ওয়ালিয়ার ময়না গ্রামের জনৈক নৈমুদ্দিনের বাড়িতে ঘাটি স্থাপন করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষন ও অগ্নি সংযোগ করতে থাকে। এ সময় পাক সেনার নিক্ষেপিত একটি রকেট সেল চামটিয়া গ্রামের আফসারের বাড়িতে এসে পড়ে এবং সেলের আঘাতে চারজন নিহত হন। মুক্তি পাগল জনতা সারা দিন তাদের গুলাগুলি চালায়। যুদ্ধের সময় তিনটি জেট বিমান আকশে চক্কর দিতে থাকে। একটি হেলিকপ্টার থেকে খাদ্য ও রসদ যোগান দেয়। এই যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন শহীদ হন। এর মধ্যে ১৫ জন শহীদের নাম সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষেতের মধ্যে তীর ও গুলিবিদ্ধ সাতজন পাক সেনার লাশও পাওয়া যায়।
রাতের আঁধার নামলে পাক সেনারা ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পালাতে থাকে। পরদিন পাশের গম ক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা পাক বাহিনীর নেতৃত্বদানকরী মেজর রাজা আসলামসহ কয়েকজন ধরা পড়ে। পরে তাদের নিয়ে এসে  লালপুর এস এস পাইলট হাই স্কুল মাঠে এক সংক্ষিপ্ত বিচারের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সাথে ২৫ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায়।
এই যুদ্ধে শহীদদের কয়েকজন হলেন, সৈয়দ আলী মোল্লা, মসলেম উদ্দিন, আবুল কশেম, আয়েজ উদ্দিন, খন্দকার নূরুন নবী মন্টু, কিয়ামত শেখ, খায়রুল আনাম সাত্তার, বকস সরদার, করম আলী, আবেদ আলী, আবুল কালাম আজাদ, কালু মিঞা, আব্দুল কুদ্দুস, সেকেন্দার আলী, আছের উদ্দিন প্রমুখ।
ময়না স্মৃতিসৌধ পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা যায়, পাঁচ শতক জমির ওপর নির্মান করা হয় ময়নার যুদ্ধে নিহত শহীদ স্মৃতিসৌধ। সাবেক সাংসদ শহীদ মমতাজ উদ্দিন ১৯৯৮ সালের ৩০ মার্চ ময়নার শহীদ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা ও পাঠাগারের জন্য দুই শতাংশ জমি প্রদান করা হলেও অর্থের অভাবে ঘর নির্মান হয়নি। ময়না ও আশেপাশের গ্রামের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। মুক্তিবাহিনীর প্রথম বিজয় জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। তারা জাতীয়ভাবে ময়নার যুদ্ধ দিবস পালনের দাবি জানান।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top