logo
news image

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে কিছু অজানা তথ্য

বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশের বুকে ৫৭তম দেশ হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করলো। চলুন জেনে নিই এ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।

এটি কোন ধরনের স্যাটেলাইট:

সাধারণত মহাকাশে  নানা ধরনের স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ পাঠানো হয়। এগুলোর মধ্য রয়েছে-আবহাওয়া স্যাটেলাইট, পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ইত্যাদি। মহাকাশে এ ধরনের স্যাটেলাইট আছে ২ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট। এর মধ্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হলো যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট।

কী কাজ করবে?

টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ। এর সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস।

এছাড়া যেসব জায়গায় অপটিক কেবল বা সাবমেরিন কেবল পৌছায় নি সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে নিশ্চিত হতে পারে ইন্টারনেট সংযোগ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট থেকে তিন ধরনের সেবা পাওয়া যায়— ১. সম্প্রচার, ২. টেলিযোগাযোগ ও  ৩. ডাটা কমিউনিকেশনস।

কোথায় অবস্থান করবে?

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে অবস্থান করবে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।

শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া।

মেয়াদ কত দিনের?

১৫ বছরের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে। তবে স্যাটেলাইটটির স্থায়িত্ব হতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত।

স্যাটেলাইট নির্মাণ:

৩.৭ টন বা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কেজি ওজনের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ডিজাইন এবং তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। আর যে রকেট এটাকে মহাকাশে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স। এটি ফ্লোরিডার লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপিত হয়।

খরচ কত?

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে বাজেট ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৭৬৫ কোটি টাকায় এ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ১৩১৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার আর বাকিটা বিদেশি অর্থায়ন থেকে এসেছে।

স্যাটেলাইট অপারেশন:

আর্থ স্টেশন থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে যেতে সময় লাগবে ৮-১১ দিন। আর পুরোপুরি কাজের জন্য প্রস্তুত হবে ৩ মাসের মধ্যে। ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইটকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটের দিকে। প্রায় ৩৩ মিনিটে এটি নির্ধারিত কক্ষপথে পৌঁছায়।

উৎক্ষেপণের পর নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যায়। এরপর স্টেজ-২ কাজ শুরু করে।পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে।

কারা দেখভাল করবে?

ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের কাছ থেকে কেনা হলেও এটি পরিচালিত হবে গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে। এর জন্য মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলকে প্রশিক্ষিত করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে মূল তত্ত্বাবধানে প্রথম তিন বছর সহায়তা করবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। দেশের ১৮ তরুণ এই স্যাটেলাইট পরিচালনা করবে।

কত টাকা আয় হবে?

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানান, এর মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় হবে প্রায় ৫ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।

সে হিসেবে ৭ বছরে খরচ উঠে আসবে।

কবে সুফল আসবে?

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এটি উৎক্ষেপণের পর মাস দুয়েক পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। ওই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সফলতা পাওয়ার পর তা ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে।


সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top